সন্ত্রাস দমন করায় যুক্তরাষ্ট্র কি নাখোশ, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

0
46

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গুম-খুনের অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র‌্যাব) ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাহলে কি সন্ত্রাস দমনে তারা নাখোশ।

বৃহস্পতিবার (০৬ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

আমেরিকার পরামর্শেই র‌্যাব সৃষ্টি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, র‌্যাবের ওপর তারা যখন স্যাংশন দিল, আমার প্রশ্নটা হলো, র‌্যাব সৃষ্টি করেছে কে? র‌্যাব সৃষ্টি তো আমেরিকারই পরামর্শেই। আমেরিকা র‌্যাব সৃষ্টি করতে পরামর্শ দিয়েছে। আমেরিকা তাদের ট্রেনিং দেয়, তাদের অস্ত্রশস্ত্র, তাদের হেলিকপ্টার এমনকি তাদের… সিস্টেম সবই আমেরিকার দেওয়া।

তিনি বলেন, তো আমেরিকা যখন স্যাংশন দেয় বা কোন কথা বলে বা অভিযোগ আনে, তখন একটাই কথা, যেমন আপনারা ট্রেনিং দিয়েছেন তেমন তারা কার্যক্রম করেছে। এখানে আমাদের করার কী আছে। আপনাদের ট্রেনিংটা যদি একটু ভালো হতো তাহলে না হয় কথা ছিল।

অপরাধ করলে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যদের বিচার হয় কিন্তু আমেরিকাতে হয় না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে আমাদের আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী সংস্থা র‌্যাব হোক আর পুলিশ হোক কেউ যদি কোনো অপরাধ করে তার কিন্তু বিচার হয়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আপনারা দেখেছেন পুলিশ ইচ্ছেমতো গুলি করে মারলেও তাদের সবসময় বিচার হয় না। শুধু একটা বিচার হলো যখন আমেরিকার লোক সবাই আন্দোলনে নামলো তখন ওই একটাই বিচার বোধ হয় সারা জীবনে তারা করতে পেরেছে। তা না হলে তো তারা কথায় কথায় গুলি করে মেরে ফেলে, একটা ছোট বাচ্চা পকেটে হাত দিলেও গুলি করে মেরে ফেলে দেয়, খেলনা পিস্তল নিয়ে তাকে মেরে ফেলে দিল। আমাদের কতজন বাঙালি মারা গেছে। সেখানে কিন্তু তারা কিছু বলে না।  সে কথা তাদের স্পষ্ট আমি বলেছি, আমি কিন্তু বসে থাকিনি।

গুম-খুন নিয়ে অনেকে বানোয়াট তথ্য দিয়ে দেশের বদনাম করছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটাই সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক- আমাদের দেশের কিছু লোক তারা যেসব দেশে থাকে যেখানে যেখানে থাকে, সেখানকার স্থানীয় সিনেটর, কংগ্রেসম্যান তাদের কাছে নানা রকম বানোয়াট মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকে, বানোয়াট তথ্য দিয়ে দিয়ে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে। দেশের বদনাম করে যারা তারা কিন্তু নিজেরা একেকটা একটা অপকর্ম করেই দেশ ছাড়ে। কোন না কোন অপরাধে তারা অপরাধী অথবা চাকরিচ্যুত। এটা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র না পৃথিবীর আরও কয়েক দেশেও।

তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, আমরা অনেকের বিচার করেছি কিন্তু তাদের ছেলেপেলেরাও আছে। আবার অনেকে পলাতক আছে। তারা বিরাট অর্থের মালিক, ২১ বছর তারাই ক্ষমতায় ছিল। বাংলাদেশটাকে শোষণ করে বহু অর্থ তারা পাচার করে নিয়ে গেছে। তারাও সব সময় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে এবং নানা ধরনের অপপ্রচার চালায়। এরকম বহু ঘটনাই আছে।

অপরকে ফাঁসানোর জন্য অনেকে গুমের নাটক করে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারপরে যখন আমরা তালিকা চাইলাম ৭৬ জনের তালিকা পাওয়া গেল। কি পাওয়া গেল আপনারা নিজেরাই ভালো জানেন। আমাদের দেশে এমনও আছে যে মাকে লুকিয়ে রেখে আরেকজনকে শায়েস্তা করতে মাকে খুন করেছে, গুম করেছে- সে ঘটনাও বের হয়ে আসছে। সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানাই। আপনারা বের করেন। কেউ বোনকে লুকিয়ে রেখে গুম হয়েছে সেটা বলে।

তিনি বলেন, ভালো একজন আঁতেলের কথা, নাম আর বলতে চাই না। ঢাকা থেকে তিনি চলে গেলেন খুলনা। বললো তাকে গুম করা হয়েছে। দেখা গেল নিউমার্কেটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। খুলনা নিউমার্কেটে তাকে পাওয়া গেল খুঁজে। এরকমও ঘটনা আছে আর যে তালিকা তাতে দেখা যাচ্ছে ভারত থেকে কিছু নাগরিক পলাতক আসামি তাদের নামও সেই তালিকায়। এটা কেমন করে হয়। সেখানেও কয়েকটা চরমপন্থী তারা ভারতে, যেহেতু ভারত থেকেই তারা পালিয়েছে কারণ সেখানে তাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি তার ভয়ে তারা সব নিয়ে বাংলাদেশে। ওই তালিকায় তাদেরও নাম দেওয়া। এরকমভাবে আরও বেশ কিছু নাম এমনকি কোন কোন  গুমের নাম তালিকায় আছে তারা আমেরিকায় লুকিয়ে আছে। সেরকম তথ্য আছে সেই বিষয়গুলো আমরা তাদের সামনে তুলে ধরেছি।

গুমের নিউজ বড় করে ছাপালেও উদ্ধারের নিউজ বড় করে ছাপানো হয় না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এই যে গুম গুম করেন তাহলে আগে দেখেন সেটা কি কারণে। আর এরকম বহু গুমের ঘটনা যখনই ঘটে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিন্তু তাদের খুঁজে বের করে। আর সেই নিউজটা আসেই না। আবার পত্রিকাও আপনারা সেটা বড় করে দেখান না, গুমটা যত বড় করে দেখান। গুমটা যখন উদ্ধার হয় তখন সমানভাবে দেখাতেন তখন বাংলাদেশের এই বদনামটা হতো না।