প্রতিবন্ধীদের স্বাবলম্বী করবে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি

0
267

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সারাবিশ্বের প্রায় ১০০ কোটির মতো মানুষ দৈহিক বা মানসিক কোনো না কোনো অক্ষমতায় ভুগছেন। এই প্রতিবন্ধী মানুষদেরকে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন সহায়ক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এগুলো তাদের আরও স্বাবলম্বী করবে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুপার হিউয়িট স্মিথসোনিয়ান ডিজাইন মিউজিয়ামে অ্যাক্সেস+অ্যাবিলিটি নামের একটি প্রদর্শনীতে প্রতিবন্ধীদের স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের জন্য বিশেষভাবে উদ্ভাবিত আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রদর্শন করা হয়। প্রদর্শনীতে তাদের জন্য সহায়ক ৭০টিরও বেশি আইটেম প্রদর্শিত হয়।

মিউজিয়ামের ডিরেক্টর অব কিউরেটোরিয়াল কারা ম্যাককার্টি জানান, প্রতিবন্ধী মানুষের প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখে এসব যন্ত্রপাতি তৈরি করেছে দক্ষ ডিজাইনাররা। এগুলো শুধু একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী বা প্রকৌশলীর কাজ নয়।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীদের অনুরোধে তাদের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এই যন্ত্রপাতিগুলোর নকশা তৈরি করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে তাদের শোনার যন্ত্রটি যাতে বোঝা না যায়, সেজন্য কানের দুলের মতো করে এটি তৈরি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কৃত্রিম পাগুলোর জন্য এমন আবরণ তৈরি করা হয়েছে, যা পোশাকের মতো ইচ্ছেমতো ব্যবহার করা যাবে। অর্থাৎ কৃত্রিম পাগুলোর ওপরের আবরণ বা কাভারগুলো পরিবর্তন করা যাবে।

কুপার হিউয়িট স্মিথসোনিয়ান ডিজাইন মিউজিয়ামের ডিরেক্টর অব কিউরেটোরিয়াল বলেন, হুইল চেয়ারগুলোও ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করেছেন ডিজাইনাররা। বিশেষ করে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষের প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখেই এগুলো তৈরি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এই হুইল চেয়ারগুলো কম ব্যয়বহুল কিন্তু খুব বিবেচনা করে তৈরি করা হয়েছে। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর রাস্তাঘাট খুব একটা প্রশস্ত নয় এবং কিছু কিছু রাস্তা বালি বা কাদায় পরিপূর্ণ থাকে। এমন রাস্তায়ও এগুলো ভালোভাবে চালানো যায়।

তিনি আরও বলেন, এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ৪ চাকার বদলে এগুলোতে ৩ চাকা লাগানো হয়েছে। কারণ ৪ চাকার চেয়ারগুলো উঁচুনিচু রাস্তায় ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে না। কিন্তু ৩ চাকারগুলো বেশি স্থিতিশীল হয়। এগুলোর উপকরণও খুবই সহজলভ্য। এগুলো নষ্ট হয়ে গেলে কম টাকায় মেরামত করা যাবে।

প্রদর্শনীতে এছাড়া এমন কিছু জিনিস ছিল, যেগুলো একজন সহজেই ব্যবহার করতে পারবে। এগুলোর মধ্যে ছিল- বিশেষ ধরনের কাপ, যেগুলোর সাহায্যে সহজেই পরিমাপ করা সম্ভব। আবার পুরুষদের জন্য বিশেষ শার্ট, যেগুলোতে কোনো বোতাম নেই কিন্তু সেগুলোতে থাকা চুম্বক বোতামের কাজ করে।
প্রদর্শনীতে আসা সোনিয়া মফসুস জানান, এটি তার কাছে খুবই উপভোগ্য ছিল। কারণ তিনি অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। কে ভেবেছিল এসব জিনিস সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে মিউজিয়ামে যেতে হতে পারে? তিনি কখনোই আশা করেননি যে এখানে এসে এত কিছু জানতে পারবেন।

কুপার হিউয়িট স্মিথসোনিয়ান ডিজাইন মিউজিয়ামের ডিরেক্টর ক্যারোলিন বোম্যান বলেন, যেকোনো মানুষ যাতে খুব সহজেই যাতায়াত করতে পারে, সেকথা মাথায় রেখেই আমাদের এই প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে। আমরা শারীরিক অক্ষমতাকে একটা নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চাই।

তিনি বলেন, আমরা এমন কিছু তৈরি করতে চাই, যা বড় বড় নেতারাও ভাবছেন। সরকারি বা বেসরকারি এক কথায় আমরা সামগ্রিকভাবে বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করতে চাই। আর সব মানুষ যাতে ভালোভাবে যাতায়াত করতে সক্ষম হয়, তারও সব রকম চেষ্টা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যেকোনো স্থানে প্রবেশ করা একজনের মৌলিক অধিকার। এর মানে হলো প্রতিবন্ধীদের ব্যবহারের জিনিসগুলো নকশা করার সময় তাদের কথা মাথায় রাখতে হবে। সমগ্র প্রক্রিয়াটিতেই তাদের উপস্থিতি কিন্তু সব রকমভাবে বাঞ্ছনীয়।