‌‌‘ইন্ডাস্ট্রিতে আজ একটা মান্নার বড় দরকার’

0
145

বিনোদন ডেস্ক : বাংলা চলচ্চিত্রের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক মান্নার মৃত্যুর পর এই অঙ্গনের বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর।

১৪ জুলাই, শনিবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে তারকা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা ‘নতুন মুখের সন্ধানে’র বিভিন্ন দিক নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মিশা এ মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) যৌথ উদ্যোগে ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’। প্রায় তিন দশক পর প্রতিযোগিতাটি আবার শুরু হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে অতীতে বহু আলোচিত নায়ক-নায়িকা এসেছিলেন রুপালি জগতে।

‘অফট্র্যাক ইভেন্টস অ্যান্ড অ্যাডভার্টাইজিং’ এবং ‘টিম ইঞ্জিন’ প্রতিযোগিতার ব্যবস্থাপনায় থাকবে। এটি সম্প্রচার করবে এশিয়ান টিভি।

ওই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উঠে আসা অভিনেতাদের একজন মিশা সওদাগর। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকার ছেলে। আমি অভিনয়ে আসার আগে আমার উচ্চারণে সমস্যাসহ আরও অনেকগুলো সমস্যা ছিল। কিন্তু সব সমস্যাকেই গ্রুমিয়ের মাধ্যমে চেষ্টা করা হয়েছে একটা প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করানোর।

সেটা ছিল ‘‘নতুন মুখের সন্ধানে’’ কম্পিটিশন। তবে আমাদের চলচ্চিত্রের চারিপাশে এখন মহাসংকট। ছবি বানাবে কে? আস্থাশীল প্রযোজকের বড়ই সংকট। ছবি যেখান থেকে মুক্তি দেওয়া হয়, সে কাকরাইলের কী অবস্থা, তা আমরা সবাই জানি। আর যেখানে প্রদর্শন করা হবে, সেখানকার জায়গাগুলোর কী হাল, তাও জানি। পরিচালকদের কথা যদি বলি, আমরা তাদের সঠিক সম্মান দিতে পারিনি।’

জনপ্রিয় এ অভিনেতা পাইরেসিকে বড় সমস্যা হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘যার কারণে নিজের মতো করেই নির্মাতারা ক্যামেরার পেছনে আছে। এ রকম হাজারো সমস্যা আছে। অভিনেতা-অভিনেত্রী অনেক আছে।

ব্যতিক্রম কখনো একটা ইন্ডাস্ট্রিতে উদাহরণ হতে পারে না। সেখান থেকেই বলছি, এই মুহূর্তে যাদের ছবি নিয়ে বক্স অফিস কাঁপবে, দর্শক দেখে হাসবে, কাঁদবে, ভেতরে এক ধরনের তাগিদ অনুভব হবে, তালি দিবে, গালি দিবে, সে মাপের শিল্পীর বড়ই অভাব। ১৮ কোটি মানুষের জন্য ক’জন শিল্পী দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়।’

চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচিত এই খলনায়কের ভাষ্য, ‘আমরা কী চাই, তা অনেকেই জানি না, যার কারণে আমাদের উদ্দেশ্যটা সম্পর্কে আমরা স্পষ্ট না। তবে কী করতে চাই, সেটা জানা ভীষণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলচ্চিত্রের এই বিপর্যস্ত অবস্থায় আমরা সবাই যদি সামনে এগিয়ে না যাই, তাহলে তো অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে। চলচ্চিত্র নিয়ে গবেষণা করার মানুষেরও সংকট রয়েছে।

শিল্পীদের তো মহাসংকট। জসিম, মান্না ও সালমান শাহর মতো অভিনেতা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ নেই বলে আজ চলচ্চিত্রে এ অবস্থা। আমাকে কেউ যদি বলে নায়ক সালমান শাহ নাকি মান্না মারা যাওয়ার পর চলচ্চিত্রের বেশি ক্ষতি হয়েছে, আমি বলব, মান্না মরে যাওয়ার পর চলচ্চিত্রের বেশি ক্ষতি হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিতে আজ একটা মান্নার বড় দরকার। ও তো শুধু একজন অভিনেতাই ছিল না, একজন সিনেমা রিসার্চারও (গবেষক) ছিল।’

মান্না, সোহেল চৌধুরী, দিতি, অমিত হাসান, আমিন খানসহ আরও বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় শিল্পী চলচ্চিত্রে এসেছেন ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে এর আগে ১৯৮৪, ১৯৮৮ ও ১৯৯০ সালে তিনবার ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া কিংবদন্তি নায়ক ফারুক, আলমগীর, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, মহাসচিব বদিউল আলম খোকন, পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান, ছটকু আহমেদ, শাহীন সুমন, শাহীন কবির টুটুল, চিত্রনায়ক জায়েদ খান, সাইমন সাদিক, এশিয়ান টেলিভিশনের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদসহ আরও অনেকেই।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে নায়ক মান্না, দিতি ও সোহেল চৌধুরীর প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর মিডিয়া পার্টনার ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় পরিচালক সমিতির।

অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘১৯৮৪ সালে ‘‘নতুন মুখের সন্ধানে’’র মাধ্যমে চলচ্চিত্র এসেছিলেন যারা, তাদের মধ্যে অনেকেই না ফেরার দেশে চলে গেছেন। কিন্তু তারা নিজেদের চেষ্টা ও যোগ্যতায় দর্শক হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। তবে ফের ২৭ বছর পর আমরা আবারও শুরু করছি এই কার্যক্রম।’

‘বর্তমানে চলচ্চিত্রে ভালো মাপের শিল্পীর সংখ্যা কম। আমরা যখন কোনো ছবির কাজ করতে যাই, তখন বিষয়টা বেশ চোখে লাগে’ বলে মন্তব্য করেন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন। তিনি বলেন, ‘তাই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ‘‘নতুন মুখের সন্ধানে’’র কার্যক্রমের কথা সেই ২০১৩ সাল থেকেই ভাবছি। আমরা পরিচালক সমিতি থেকেই কয়েক বছর ধরেই চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম আয়োজনটি করার। কিন্তু নানাবিধ সংকটের কারণে আমরা আর কাজটি নিয়ে সামনে এগোতে পারছিলাম না। তবে এখন সবকিছুরই একটা সমাধান হয়ে গেছে। তাই সবার সহযোগিতা চাই।’

নতুন মুখের সন্ধান করেই চলচ্চিত্র একটু সমৃদ্ধশালী হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন নায়ক আলমগীর। তিনি বলেন, ‘দেরিতে হলেও আমরা আবার নতুন মুখের সন্ধানে কার্যক্রম শুরু করেছি। তবে দুর্ভাগ্য, আমরা সেখান থেকে অনেককেই হারিয়েছি।যাদের কারণে দীর্ঘ ২৭ বছর পর ফের এ উদ্যোগ চালু হচ্ছে, তাদের প্রতি রইল অভিনন্দন। আর একটি অনুরোধ, শুধু নতুন মুখ এনে ছেড়ে দিলে হবে না। তাদের গড়ে তোলার দায়িত্বও কিন্তু আমাদের।’

চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক ও ব্যবসায়ী ফারুক। ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। বাংলা চলচ্চিত্রে গ্রামীণ চরিত্রের অপ্রতিদ্বন্দ্বী এই নায়ক ‘মিয়া ভাই’ হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে চলচ্চিত্রের সংগঠন চলচ্চিত্র পরিবারের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ফারুক বলেন, ‘শুধু শিল্পী হলেই সব সমস্যার সমাধান হবে, তা নয়; সংকট তো বহু। একবার প্রতিযোগিতার আয়োজন করার পর থেমে গেলে তা সংকট সমাধানে খুব একটা ভূমিকা রাখবে না। আজ ৩০ বছর ধরে চলচ্চিত্র পঙ্গু হয়ে আছে।

সবার আগে পঙ্গুত্ব দূর করতে হবে। সেখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী তো সিনেমার বিষয়ে বেশ উদার। সিনেমার প্রতি হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি কাকে দিবেন, সে সময় তিনি কারো হাতটা খুঁজে পান না।’